দিনগুলি মোর সোনার খাঁচায়রইল না(বিচিত্র)
দিনগুলি মোর সোনার খাঁচায় রইল না–
সেই-যে আমার নানা রঙের দিনগুলি।
কান্নাহাসির বাঁধন তারা সইল না–
সেই-যে আমার নানা রঙের দিনগুলি।।
আমার প্রাণের গানের ভাষা
শিখবে তারা ছিল আশা
উড়ে গেল, সকল কথা কইল না–
সেই-যে আমার নানা রঙের দিনগুলি।।
স্বপন দেখি, যেন তারা কার আশে
ফেরে আমার ভাঙা খাঁচার চার পাশে–
সেই-যে আমার নানা রঙের দিনগুলি।
এত বেদন হয় কি ফাঁকি।
ওরা কি সব ছায়ার পাখি।
আকাশ-পারে কিছুই কি গো বইল না–
সেই-যে আমার নানা রঙের দিনগুলি।
আমার মন মানে না– দিনরজনী ।
আমি কী কথা স্মরিয়া এ তনু ভরিয়া পুলক রাখিতে নারি
ওগো কী ভাবিয়া মনে এ দুটি নয়নে উথলে নয়নবারি–
ওগো সজনি ।।
সে সুধাবচন, সে সুখপরশ, অঙ্গে বাজিছে বাঁশি ।
তাই শুনিয়া শুনিয়া আপনার মনে হৃদয় হয় উদাসী–
কেন না জানি।।
ওগো, বাতাসে কী কথা ভেসে চলে আসে, আকাশে কী মুখ জাগে ।
ওগো, বনমর্মরে নদীনির্ঝরে কী মধুর সুর লাগে ।
ফুলের গন্ধ বন্ধুর মতো জড়ায়ে ধরিছে গলে–
আমি এ কথা, এ ব্যথা, সুখব্যাকুলতা কাহার চরণতলে
দিব নিছনি ।।
আমার ভাঙা পথের রাঙা ধুলায় পড়েছে কার পায়ের চিহ্ন !
তারি গলার মালা হতে পাপড়ি হোথা লুটায় ছিন্ন।।
এল যখন সাড়াটি নাই, গেল চলে জানালো তাই–
এমন ক’রে আমারে হায় কে বা কাঁদায় সে জন ভিন্ন।।
তখন তরুণ ছিল অরুণ আলো, পথটি ছিল কুসুমকীর্ণ।
বসন্ত যে রঙিন বেশে ধরায় সে দিন অবতীর্ণ।
সে দিন খবর মিলল না যে, রইনু বসে ঘরের মাঝে–
আজকে পথে বাহির হব বহি আমার জীবন জীর্ণ।
আমার বেলা যে যায়সাঁঝ-বেলাতে
তোমার সুরে সুরে সুর মেলাতে।।
একতারাটির একটি তারে গানের বেদন বইতে নারে,
তোমার সাথে বারে বারে হার মেনেছি এই খেলাতে
তোমার সুরে সুরে সুর মেলাতে।।
এ তার বাঁধা কাছের সুরে,
ঐ বাঁশি যে বাজে দূরে।
গানের লীলার সেই কিনারে যোগ দিতে কি সবাই পারে
বিশ্বহৃদয়পারাবারে রাগরাগিণীর জাল ফেলাতে–
তোমার সুরে সুরে সুর মেলাতে ?।
আজি বাঙলাদেশের হৃদয় হতে কখনআপনি
তুমি এই অপরূপ রূপে বাহির হলে জননী !
ওগো মা, তোমায় দেখে দেখে আঁখি না ফিরে !
তোমার দুয়ার আজি খুলে গেছে সোনার মন্দিরে ।।
ডান হাতে তোর খড়্গ জ্বলে, বাঁ হাত করে শঙ্কাহরণ,
দুই নয়নে স্নেহের হাসি, ললাটনেত্র আগুনবরণ ।
ওগো মা, তোমার কী মুরতি আজি দেখি রে !
তোমার দুয়ার আজি খুলে গেছে সোনার মন্দিরে।।
তোমার মুক্তকেশের পুঞ্জ মেঘে লুকায় অশনি,
তোমার আঁচল ঝলে আকাশতলে রৌদ্রবসনী !
ওগো মা, তোমায় দেখেদেখে আঁখি না ফিরে !
তোমার দুয়ার আজি খুলে গেছে সোনার মন্দিরে ।।
যখন অনাদরে চাই নি মুখে ভেবেছিলেম দুঃখিনী মা
আছে ভাঙা ঘরে একলা পড়ে, দুখের বুঝি নাইকো সীমা ।
কোথা সে তোর দরিদ্র বেশ, কোথা সে তোর মলিন হাসি--
আকাশে আজ ছড়িয়ে গেল ওই চরণের দীপ্তিরাশি !
ওগো মা, তোমার কী মুরতি আজি দেখি রে !
তোমার দুয়ার আজি খুলে গেছে সোনার মন্দিরে ।।
আজি দুখের রাতে সুখের স্রোতে ভাসাও ধরণী--
তোমার অভয় বাজে হৃদয়মাঝে হৃদয়হরণী !
ওগো মা, তোমায় দেখেদেখে আঁখি না ফিরে !
তোমার দুয়ার আজি খুলে সোনার মন্দিরে ।।
আজ শ্রাবণের আমন্ত্রণে
দুয়ার কাঁপে ক্ষণে ক্ষণে,
ঘরের বাঁধন যায় বুঝি আজ টুটে।।
ধরিত্রী তার অঙ্গনেতে নাচের তালে ওঠেন মেতে,
চঞ্চল তাঁর অঞ্চল যায় লুটে।।
প্রথম যুগের বচন শুনি মনে
নবশ্যামল প্রাণের নিকেতনে।
পুব-হাওয়া ধায় আকাশতলে, তার সাথে মোর ভাবনা চলে
কালহারা কোন্ কালের পানে ছুটে।।
যখন পড়বে না মোর পায়ের চিহ্ন এই বাটে
যখন পড়বে না মোর পায়ের চিহ্ন এই বাটে,আমি বাইব না মোর খেয়াতরী এই ঘাটে, চুকিয়ে দেব বেচাকেনা, মিটিয়ে দেব গো, মিটিয়ে দেব লেনা দেনা, বন্ধ হবে আনাগোনা এই হাটে-- তখন আমায় নাইবা মনেরাখলে, তারার পানে চেয়েচেয়ে নাইবা আমায় ডাকলে।যখন জমবে ধুলা তানপুরাটার তারগুলায়, কাঁটালতা উঠবে ঘরের দ্বারগুলায়, আহা, ফুলের বাগান ঘন ঘাসের পরবে সজ্জা বনবাসের, শ্যাওলা এসে ঘিরবে দিঘির ধারগুলায়-- তখন আমায় নাইবা মনেরাখলে, তারার পানে চেয়েচেয়ে নাইবা আমায় ডাকলে।তখন এমনি করেই বাজবে বাঁশি এই নাটে, কাটবে দিন কাটবে, কাটবে গো দিন আজও যেমন দিন কাটে, আহা, ঘাটে ঘাটে খেয়ারতরী এমনি সে দিন উঠবে ভরি-- চরবে গোরু খেলবে রাখাল ওই মাঠে। তখন আমায় নাইবা মনেরাখলে, তারার পানে চেয়েচেয়ে নাইবা আমায় ডাকলে।তখন কে বলে গো সেই প্রভাতে নেই আমি। সকল খেলায় করবে খেলা এই আমি-- আহা, নতুন নামে ডাকবেমোরে, বাঁধবে নতুন বাহু-ডোরে, আসব যাব চিরদিনের সেই আমি। তখন আমায় নাইবা মনেরাখলে, তারার পানে চেয়েচেয়ে নাইবা আমায় ডাকলে॥
আমারো পরানো যাহা চায়
তুমি তাই, তুমি তাই গো।
তোমা ছাড়া আর এ জগতে
মোর কেহ নাই, কিছু নাই গো।
তুমি সুখ যদি নাহি পাও
যাও সুখের সন্ধানে যাও
আমি তোমারে পেয়েছি হৃদয় মাঝে
আরো কিছু নাহি চাই গো।
আমি তোমারো বিরহে রহিব বিলীন
তোমাতে করিব বাস
দীর্ঘ দিস, দীর্ঘ রজনী, দীর্ঘ বরষ মাস
যদি আরো কারে ভালবাস
যদি আরো ফিরে নাহি আস
তবে তুমি যাহা চাও, তাই যেন পাও।
আমি যত দুঃখ পাই গো।
আমারো পরানো যাহা চায়
তুমি তাই, তুমি তাই গো।
তোমা ছাড়া আর এ জগতে
মোর কেহ নাই, কিছু নাই গো।
দিনগুলি মোর সোনার খাঁচায় রইল না–
সেই-যে আমার নানা রঙের দিনগুলি।
কান্নাহাসির বাঁধন তারা সইল না–
সেই-যে আমার নানা রঙের দিনগুলি।।
আমার প্রাণের গানের ভাষা
শিখবে তারা ছিল আশা
উড়ে গেল, সকল কথা কইল না–
সেই-যে আমার নানা রঙের দিনগুলি।।
স্বপন দেখি, যেন তারা কার আশে
ফেরে আমার ভাঙা খাঁচার চার পাশে–
সেই-যে আমার নানা রঙের দিনগুলি।
এত বেদন হয় কি ফাঁকি।
ওরা কি সব ছায়ার পাখি।
আকাশ-পারে কিছুই কি গো বইল না–
সেই-যে আমার নানা রঙের দিনগুলি।
আমার মন মানে না– দিনরজনী ।
আমি কী কথা স্মরিয়া এ তনু ভরিয়া পুলক রাখিতে নারি
ওগো কী ভাবিয়া মনে এ দুটি নয়নে উথলে নয়নবারি–
ওগো সজনি ।।
সে সুধাবচন, সে সুখপরশ, অঙ্গে বাজিছে বাঁশি ।
তাই শুনিয়া শুনিয়া আপনার মনে হৃদয় হয় উদাসী–
কেন না জানি।।
ওগো, বাতাসে কী কথা ভেসে চলে আসে, আকাশে কী মুখ জাগে ।
ওগো, বনমর্মরে নদীনির্ঝরে কী মধুর সুর লাগে ।
ফুলের গন্ধ বন্ধুর মতো জড়ায়ে ধরিছে গলে–
আমি এ কথা, এ ব্যথা, সুখব্যাকুলতা কাহার চরণতলে
দিব নিছনি ।।
আমার ভাঙা পথের রাঙা ধুলায় পড়েছে কার পায়ের চিহ্ন !
তারি গলার মালা হতে পাপড়ি হোথা লুটায় ছিন্ন।।
এল যখন সাড়াটি নাই, গেল চলে জানালো তাই–
এমন ক’রে আমারে হায় কে বা কাঁদায় সে জন ভিন্ন।।
তখন তরুণ ছিল অরুণ আলো, পথটি ছিল কুসুমকীর্ণ।
বসন্ত যে রঙিন বেশে ধরায় সে দিন অবতীর্ণ।
সে দিন খবর মিলল না যে, রইনু বসে ঘরের মাঝে–
আজকে পথে বাহির হব বহি আমার জীবন জীর্ণ।
আমার বেলা যে যায়সাঁঝ-বেলাতে
তোমার সুরে সুরে সুর মেলাতে।।
একতারাটির একটি তারে গানের বেদন বইতে নারে,
তোমার সাথে বারে বারে হার মেনেছি এই খেলাতে
তোমার সুরে সুরে সুর মেলাতে।।
এ তার বাঁধা কাছের সুরে,
ঐ বাঁশি যে বাজে দূরে।
গানের লীলার সেই কিনারে যোগ দিতে কি সবাই পারে
বিশ্বহৃদয়পারাবারে রাগরাগিণীর জাল ফেলাতে–
তোমার সুরে সুরে সুর মেলাতে ?।
আজি বাঙলাদেশের হৃদয় হতে কখনআপনি
তুমি এই অপরূপ রূপে বাহির হলে জননী !
ওগো মা, তোমায় দেখে দেখে আঁখি না ফিরে !
তোমার দুয়ার আজি খুলে গেছে সোনার মন্দিরে ।।
ডান হাতে তোর খড়্গ জ্বলে, বাঁ হাত করে শঙ্কাহরণ,
দুই নয়নে স্নেহের হাসি, ললাটনেত্র আগুনবরণ ।
ওগো মা, তোমার কী মুরতি আজি দেখি রে !
তোমার দুয়ার আজি খুলে গেছে সোনার মন্দিরে।।
তোমার মুক্তকেশের পুঞ্জ মেঘে লুকায় অশনি,
তোমার আঁচল ঝলে আকাশতলে রৌদ্রবসনী !
ওগো মা, তোমায় দেখেদেখে আঁখি না ফিরে !
তোমার দুয়ার আজি খুলে গেছে সোনার মন্দিরে ।।
যখন অনাদরে চাই নি মুখে ভেবেছিলেম দুঃখিনী মা
আছে ভাঙা ঘরে একলা পড়ে, দুখের বুঝি নাইকো সীমা ।
কোথা সে তোর দরিদ্র বেশ, কোথা সে তোর মলিন হাসি--
আকাশে আজ ছড়িয়ে গেল ওই চরণের দীপ্তিরাশি !
ওগো মা, তোমার কী মুরতি আজি দেখি রে !
তোমার দুয়ার আজি খুলে গেছে সোনার মন্দিরে ।।
আজি দুখের রাতে সুখের স্রোতে ভাসাও ধরণী--
তোমার অভয় বাজে হৃদয়মাঝে হৃদয়হরণী !
ওগো মা, তোমায় দেখেদেখে আঁখি না ফিরে !
তোমার দুয়ার আজি খুলে সোনার মন্দিরে ।।
আজ শ্রাবণের আমন্ত্রণে
দুয়ার কাঁপে ক্ষণে ক্ষণে,
ঘরের বাঁধন যায় বুঝি আজ টুটে।।
ধরিত্রী তার অঙ্গনেতে নাচের তালে ওঠেন মেতে,
চঞ্চল তাঁর অঞ্চল যায় লুটে।।
প্রথম যুগের বচন শুনি মনে
নবশ্যামল প্রাণের নিকেতনে।
পুব-হাওয়া ধায় আকাশতলে, তার সাথে মোর ভাবনা চলে
কালহারা কোন্ কালের পানে ছুটে।।
যখন পড়বে না মোর পায়ের চিহ্ন এই বাটে
যখন পড়বে না মোর পায়ের চিহ্ন এই বাটে,আমি বাইব না মোর খেয়াতরী এই ঘাটে, চুকিয়ে দেব বেচাকেনা, মিটিয়ে দেব গো, মিটিয়ে দেব লেনা দেনা, বন্ধ হবে আনাগোনা এই হাটে-- তখন আমায় নাইবা মনেরাখলে, তারার পানে চেয়েচেয়ে নাইবা আমায় ডাকলে।যখন জমবে ধুলা তানপুরাটার তারগুলায়, কাঁটালতা উঠবে ঘরের দ্বারগুলায়, আহা, ফুলের বাগান ঘন ঘাসের পরবে সজ্জা বনবাসের, শ্যাওলা এসে ঘিরবে দিঘির ধারগুলায়-- তখন আমায় নাইবা মনেরাখলে, তারার পানে চেয়েচেয়ে নাইবা আমায় ডাকলে।তখন এমনি করেই বাজবে বাঁশি এই নাটে, কাটবে দিন কাটবে, কাটবে গো দিন আজও যেমন দিন কাটে, আহা, ঘাটে ঘাটে খেয়ারতরী এমনি সে দিন উঠবে ভরি-- চরবে গোরু খেলবে রাখাল ওই মাঠে। তখন আমায় নাইবা মনেরাখলে, তারার পানে চেয়েচেয়ে নাইবা আমায় ডাকলে।তখন কে বলে গো সেই প্রভাতে নেই আমি। সকল খেলায় করবে খেলা এই আমি-- আহা, নতুন নামে ডাকবেমোরে, বাঁধবে নতুন বাহু-ডোরে, আসব যাব চিরদিনের সেই আমি। তখন আমায় নাইবা মনেরাখলে, তারার পানে চেয়েচেয়ে নাইবা আমায় ডাকলে॥
আমারো পরানো যাহা চায়
তুমি তাই, তুমি তাই গো।
তোমা ছাড়া আর এ জগতে
মোর কেহ নাই, কিছু নাই গো।
তুমি সুখ যদি নাহি পাও
যাও সুখের সন্ধানে যাও
আমি তোমারে পেয়েছি হৃদয় মাঝে
আরো কিছু নাহি চাই গো।
আমি তোমারো বিরহে রহিব বিলীন
তোমাতে করিব বাস
দীর্ঘ দিস, দীর্ঘ রজনী, দীর্ঘ বরষ মাস
যদি আরো কারে ভালবাস
যদি আরো ফিরে নাহি আস
তবে তুমি যাহা চাও, তাই যেন পাও।
আমি যত দুঃখ পাই গো।
আমারো পরানো যাহা চায়
তুমি তাই, তুমি তাই গো।
তোমা ছাড়া আর এ জগতে
মোর কেহ নাই, কিছু নাই গো।