চুয়াডাঙ্গা ফোরাম
Would you like to react to this message? Create an account in a few clicks or log in to continue.

এসো বিজয়ের গান গাই...


You are not connected. Please login or register

বর্ষা দিনের চিঠি

2 posters

Go down  Message [Page 1 of 1]

শ্রাবণ

শ্রাবণ

তুমি আমাকে ভুলে গেছো আমি বিশ্বাস করি না। তবে আমাকে অপেক্ষমান রেখেও তুমি নির্বিকার উপেক্ষা করে চলে যেতে পারো অন্য কারো হাত ধরে, সেও আমি বিলক্ষণ জানি।
আমি আর তোমার কাছে যাই না। তুমিডাকো না বলে? আমিও তোমাকে ফিরে ডাকি না আর, তুমি আসবে না বলে? তোমাকে কেবল দূর থেকেই দেখি। মন ভরে দেখি, অতৃপ্তি নিয়ে দেখি। বর্ষার দিনে বারান্দায় দাঁড়িয়ে অন্য লোকের সাথে তোমারঘনিষ্ঠতা দেখে দেখে ঈর্ষান্বিতহয়ে চায়ের কাপে আক্ষেপের চুমুকদেই।

অতীতের দিনগুলিতে আমি বারণ করলেও বারণ করেও রূখতে পারতাম না তোমাকে। আমিও যখন খুশী তোমার কাছে চলে যেতাম। আমার বাড়ী ফেরার সময় পার হয়ে গেলেও তুমি আমাকে আটকে রাখতে চাইতে। দেরী করিয়ে দিতে পথে। আমার সঙ্গ তোমার ভালো লাগতো বলে আমাকে নানান অজুহাতে আটকে রাখতে। এখন সেই দিনগুলি অতীতেরপাথরে বাঁধাই হয়ে গেছে।
তোমাকে নিয়ে আমার অনেক স্মৃতি।তবু একটা দিনের কথাই সবচেয়ে বেশী বাজে। আমি কখনো ভুলবো না ১৪ মার্চ ১৯৯৬। তারিখটা কেন মনে আছে অবাক হচ্ছো? আমি সেদিন রাতে বাড়ি ফিরে ডায়েরী লিখেছিলাম তোমাকে নিয়ে। জীবনে প্রথম তোমাকে ঘনিষ্ঠ করে পাওয়ার স্মৃতিটা তুলে রাখতে চেয়েছিলাম।

আর দশটা দিনের মতো সেদিনও অফিস থেকে বাড়ী ফেরার জন্য প্রস্তুতহচ্ছিলাম। রাত আটটা কি নটা বাজে। জানো তো আমাদের বাড়ি থেকে অফিস কতোদূরে। অফিস থেকে সবসময় গাড়ি পাওয়া যায় না। সেদিনও গাড়ি ছিল না। অথচ গাড়ি ছাড়া হেঁটে এমনকি প্রধান সড়কে ওঠাও কঠিন। হঠাৎ চারদিক কাঁপিয়ে তুমুল ঝড় বাতাস শুরু হলো। কারেন্ট চলে গিয়ে বিশ্বজুড়ে গহীন আঁধার। আমি সেইআঁধারে পথ খুজে নীচে নামলাম।

নীচে নেমেই দেখি আমার আগেই তুমি নেমে গেছো এবং যেন প্রতীক্ষা করছিলে আমার। সেই অন্ধকারেও আমি তোমার প্রতীক্ষাঅনুভব করলাম। তুমি সেই ঝড় বাতাসের মধ্যে কলকল করে হাসছিলে। হাসবেই তো, তুমি তো ঝড়কন্যার মতো উদ্দাম স্বাধীন। আমাকে দেখার পর তোমার হাসির কলকাকলী যেন আরো বেড়ে গেল। তুমি জানতেই আমি তোমার কাছে আসবো।
তুমি আমাকে হাতের ইশারায় ডাকলে। এর আগেও ডেকেছিলে অনেকবার। তোমার চোখ হাসতো আমাকে দেখে। আমি বুঝে নিতাম তোমার নিঃশব্দ আমন্ত্রণ। ছুটে যেতাম তোমার কাছে। তবু সেদিনেরসেই ডাকটা ছিল অন্য দশটা দিনের চেয়ে আলাদা। সেদিনের ডাক ছিল একেবারে সরাসরি। ওই আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করার শক্তি আমার ছিল না।

পাছে কেউ পাগল বলে ভেবে একটু দ্বিধা থাকলেও, দুমিনিটে দ্বিধা কাটিয়ে তোমার কাছে ছুটেচলে গেলাম। তুমি সাথে সাথে আমাকে আপাদমস্তকে জড়িয়ে নিলে। ভাসিয়ে নিলে তোমার হাসির উল্লাসে। আমি নিদারুণ সিক্ত তোমার প্রেমে, আমাদেরকে দেখছিল সবাই, আমি নিশ্চিত তাদের কেউ কেউ ঈর্ষাবোধ করছিল। তবু আমি কাউকে তোয়াক্কা না করে তোমার প্রেমে মুগ্ধ হয়ে তোমার অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করতে করতে পথ চলছি। তুমি আমাকে ছুঁয়ে আছো, ভিজিয়ে দিচ্ছো আমার হৃদয়, আমার বুকের ভেতর বিচিত্র রোমাঞ্চ।

তুমি কি জানতে তোমাকে কতোটা ভালোবাসতাম? এত প্রেম পাবার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা ছিল বলে তোমার দিকে হাত বাড়াতে সাহস করিনি। সেদিনই প্রথম সব নিষেধাজ্ঞা ভুলে আমি ছুটে গিয়েছিলাম তোমার কাছে। তুমি অমন করে না ডাকলে আমি অতটা দুঃসাহসী হতে পারতাম না।

কেন অমন করে ডেকেছিলে সেদিন? আমার সমস্ত যাত্রাপথে তুমি আমাকে আচ্ছন্নতায় ডুবিয়ে রাখলে। তোমার স্পর্শে আমার সমস্ত অতীত বর্তমান ভবিষ্যত ভুলে আমি ভিন্ন জগতের বাসিন্দাহয়ে গিয়েছিলাম। আমার সমস্ত সত্ত্বা দিয়ে আমি তোমার কাছে আত্মসমর্পন করেছিলাম। আমি তখন কেবলি তোমার ছিলাম।

যে যাত্রাপথকে আমার চিরকাল বিরক্তিকর দীর্ঘতর মনে হতো, সময়কাটতেই চাইতো না, সেই যাত্রাপথটা সেদিন কেমন হুট করেশেষ হয়ে গেল। আরেকটু দীর্ঘ হতে পারতো না পথটা? আরেকটু বেশী সময় কাছে থাকার সুযোগ? পথ ফুরিয়ে যাওয়াতে আমাকে বাড়ীর পথধরতে হয়েছিল। আমার ভীষণ ইচ্ছে করছিল তোমাকে বাড়ী নিয়ে যাই। মাকে বলি, দেখো এই কাকে নিয়ে এসেছি। কিন্তু সাহস হয়নি, তোমারব্যাপারে মা বরাবর খড়গহস্ত। মায়ের ধারণা তুমি আমার অনিষ্ট করবে। এই ভুল ধারণা আমি কখনোই ভাঙাতে পারিনি। তোমাকে ছেড়ে আসতে সেদিন আমার খুব কষ্ট হচ্ছিল।

আর তুমিও কেমন! যে তুমি আমাকে এমন করে জড়িয়ে ছিলে সমস্ত পথ জুড়ে, সেই তুমিও আমার হাত ছেড়ে দিলে বাড়ীর কাছে আসতেই, হাল ছেড়ে দিলে যেন। আমাকে বাড়ী ফেরার সুযোগ করে দিতে তুমি সরে গেলে আমার পাশ থেকে। অভিমান হয়েছিল তোমার? আমারও খুব অভিমান হয়েছিল। আসলে আমরা কেউ কাউকে বুঝিনি। বোঝাতে পারিনি। আমাদের হলো না আরো সময় কাছাকাছি থাকা। স্মৃতির পাথরে খোদাই করে লেখা হয়ে গেল দিনটা।

এখনো তুমি আসো বৈশাখে জ্যৈষ্ঠেআষাঢ়ে শ্রাবনে, কিন্তু কখনোই সেদিনের মতো নয়। ওই দিনটা গেছে,একেবারেই গেছে। তবু আমি তোমার ভুলি না অঝোর ধারার বৃষ্টি। কৃষকের ফসল নষ্ট করার অপরাধে অভিযুক্ত করেও তোমাকে ভালো না বেসে পারি না হে আমার প্রিয়তমা বৃষ্টি।

অরিজিনাল লিংক
http://www.amrabondhu.com/pustok/3520

মেঘের দেশে

মেঘের দেশে

আসাধারণ একটি লেখা। শিয়ার করার জন্য ধন্যবাদ।

Back to top  Message [Page 1 of 1]

Permissions in this forum:
You cannot reply to topics in this forum